ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫ , ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেভ দ্য রোড-এর প্রতিবেদন


আপডেট সময় : ২০২৪-১২-৩০ ১৬:০৯:৪৯
সেভ দ্য রোড-এর প্রতিবেদন সেভ দ্য রোড-এর প্রতিবেদন
 
 
সেভ দ্য রোড-এর প্রতিবেদন

২০২৪ সালে সড়কে ঝরেছে ৬ হাজার ৪৪৪ প্রাণ

 বেড়েছে ডাকাতি, নিরাপত্তাহীন সড়ক-রেল ও নৌপথ

৩৮ হাজার ৫৪০ দুর্ঘটনায় আহত ৩৭ হাজার ১১৩ জন                                                                
 
ফুটপাত দখলমুক্ত ও ৩৫০ সিসি বাইক নিষিদ্ধ না করলে অনশনে বসার ঘোষণা

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়কপথে চরম নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা আর আইন না মেনে বাহন চলাচলের কারণে ছোট-বড় ৩৮ হাজার ৫৪০ দুর্ঘটনায় আহত ৩৭ হাজার ১১৩ এবং নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৪৪৪ জন। ৩০ ডিসেম্বর ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে বাৎসরিক প্রতিবেদন পাঠ ও সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা আরো জানান, বাইক লেন না থাকা, সেভ দ্য রোড-এর নিয়মিত প্রতিবেদন-সচেতনতা ক্যাম্পোইনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরও রাইড শেয়ারিং এবং ৩৫০ সিসিসহ দ্রুতগতি সম্পন্ন মোটর সাইকেলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০৯৮১ টি ছোট-বড় এই দুর্ঘটনাগুলোতে আহত হয়েছেন ৯৮৬৬ এবং নিহত হয়েছেন ১৩০৩ জন।  ৮৩১৩টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৯৫০এবং নিহত হয়েছেন ১৩১৬ জন।  নির্ধারিত গতিসীমা না মেনে, বিশ্রাম না নিয়ে টানা ১২ থেকে ২০ ঘন্টা বাহন চালানোসহ নির্ধারিত ট্রাফিক আইনসহ প্রয়োজনীয় নিয়ম না মানায় ৯৪৩৯ টি ছোট-বড় বাস দুর্ঘটনায় আহত ৯২৯১ এবং নিহত হয়েছেন ২০২৮ জন; সেই সাথে দায়িত্বে অবহেলা, স্থানিয় পুলিশ-প্রশাসনের দুর্নীতিসহ বিভিন্নভাবে সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ বাহন নাসিমন-করিমন এবং অন্যান্য ৩ চাকার বিভিন্ন ধরণের বাহনে ৯৮০৭ টি ছোট-বড় দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১১০২৪ এবং নিহত হয়েছেন ১৭৯৭ জন। সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুল মল্লিকসহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা সেল সদস্যদের তত্ত্বাবধানে দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক নয়াদিগন্ত, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক কালবেলাসহ ১৭ টি জাতীয় দৈনিক, আরটিভি, জিটিভি, যমুনা নিউজ, মাছরাঙ্গা, এটিএন বাংলাসহ ২০ টিভি-চ্যানেল, জাগো নিউজ, বাংলা নিউজ, বিডিনিউজসহ ২২ টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানিয় প্রত্যক্ষদর্শী-সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবিগণের দেয়া তথ্যানুসারে এই প্রতিবেদন দুর্ঘটনামুক্ত পথ-এর জন্য তৈরি করা হয়েছে। আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার জন্য নিবেদিত দেশের একমাত্র সচেতনতা-গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়- জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সড়কে চরম নৈরাজ্য-আইন না মানার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। যা ক্রমশ সড়কে দূর্ঘটনা যেমন বৃদ্ধি করছে, তেমন আহত এবং নিহতের সংখ্যাও বাড়াচ্ছে। এমতবস্থায় সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে সরকারি সহায়তার মাধ্যমে সমাজসচেতনতা, গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবি কর্মকাণ্ডের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্তবর্তীকালিন সরকারের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টির পাশাপাশি  ফুটপাত দখলমুক্ত ও ৩৫০ সিসি বাইক নিষিদ্ধ না করলে অনশনের ঘোষণাও দেন  সেভ দ্য রোড মহাসচিব। 

সেভ দ্য রোড-এর দাবি অনুযায়ী প্রতি ৩ কিলোমিটারে পুলিশ বুথ বা ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন না করা ও হাইওয়ে পুলিশসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পুলিশ-প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সড়কপথে চলতি বছরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৯৬ টি, এতে ডাকাতদের হামলায় আহত ১৫৫ এবং নিহত হয়েছেন ১ জন। এছাড়াও নারী শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটেছে ৬১৪ টি, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১ টি। যার অধিকাংশই থানা-পুলিশের স্মরণাপন্ন হয়ানি বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবিদের তথ্যে উঠে এসেছে। নৌপথে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের দায়িত্ব অবহেলার সুযোগে অন্যান্য বছরের তুলনায় ডাকাতি বেড়েছে। ১৬১ টি ডাকাতির ঘটনায় সর্বশেষ ৭ জনসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। রেলপথে মহাখালীতে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া ইট-পাটকেলে ৩১ জনসহ মোট ৫৩ জন আহত হয়েছেন।

১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত নৌপথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৭১১ টি। আহত ১৪৫১ জন, নিহত হয়েছেন ১১২ জন।
১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেলপথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৮০৬ টি। আহত হয়েছে ১১৭৬ জন, নিহত হয়েছে ১২৪ জন।
১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে আকাশপথে ৯ মে সকালে ৩২ বছর বয়সী যুদ্ধবিমানের পাইলট বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ বিমান দুর্ঘটনায় শাহাদাত বরণ করেন। এই ঘটনা ব্যতিত আর কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ্য হয়েছেন ১ হাজার ৭৬৬ জন মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শী- সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবিদের মাধ্যমে এই তথ্য সংগৃহিত হয়েছে।

সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনামুক্ত পথ চলাচলের অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগষের সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই বলে সেভ দ্য রোড মনে করে। পাশাপাশি সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে গত ১৭ বছর যাবৎ ৪ পথ দুর্ঘটনামুক্ত করতে সেভ দ্য রোড-এর ৭ দফা দাবি নিয়ে কাজ করছে। ৭ দফা- ১. মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। ২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দূর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারীভাবে দিতে হবে। ৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. পথ দূর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। ৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতু সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।  

সেভ দ্য রোড-এর প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদীর সভাপতিত্বে প্রতিবেদন পাঠ ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. আনিছুর রহমান, এ্যাডভোকেট এএফএম ফরহাদ, ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুল মল্লিক, রেজাউল করিম, উজ্জল শেখ, মো. মাসুম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ‘সেভ দ্য রোড-এর অঙ্গীকার পথ দূর্ঘটনা থাকবে না আর...’ বাক্যটিকে লালন রেখে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ২০০৭ সালে পথচলা শুরু করে আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার জন্য নিবেদিত দেশের একমাত্র সচেতনতা-গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড।



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ